জুতা-আবিষ্কার – রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
কহিল রাজা, ‘সে কথা বড়ো খাঁটি,
কিন্তু মোর হতেছে মনে সন্ধ,
মাটির ভয়ে রাজ্য হবে মাটি
দিবসরাতি রহিলে আমি বন্ধ।’
কহিল সবে, ‘চামারে তবে ডাকি
চর্ম দিয়া মুড়িয়া দাও পৃথ্বী।
ধূলির মহী ঝুলির মাঝে ঢাকি
মহীপতির রহিবে মহাকীর্তি।’
কহিল সবে, ‘হবে সে অবহেলে,
যোগ্যমতো চামার যদি মেলে।’
কিন্তু মোর হতেছে মনে সন্ধ,
মাটির ভয়ে রাজ্য হবে মাটি
দিবসরাতি রহিলে আমি বন্ধ।’
কহিল সবে, ‘চামারে তবে ডাকি
চর্ম দিয়া মুড়িয়া দাও পৃথ্বী।
ধূলির মহী ঝুলির মাঝে ঢাকি
মহীপতির রহিবে মহাকীর্তি।’
কহিল সবে, ‘হবে সে অবহেলে,
যোগ্যমতো চামার যদি মেলে।’
রাজার চর ধাইল হেথা হোথা,
ছুটিল সবে ছাড়িয়া সব কর্ম।
যোগ্যমতো চামার নাহি কোথা,
না মিলে তত উচিত‐মতো চর্ম।
তখন ধীরে চামার‐কুলপতি
কহিল এসে ঈষৎ হেসে বৃদ্ধ,
‘বলিতে পারি করিলে অনুমতি,
সহজে যাহে মানস হবে সিদ্ধ।
নিজের দুটি চরণ ঢাকো, তবে
ধরণী আর ঢাকিতে নাহি হবে।’
ছুটিল সবে ছাড়িয়া সব কর্ম।
যোগ্যমতো চামার নাহি কোথা,
না মিলে তত উচিত‐মতো চর্ম।
তখন ধীরে চামার‐কুলপতি
কহিল এসে ঈষৎ হেসে বৃদ্ধ,
‘বলিতে পারি করিলে অনুমতি,
সহজে যাহে মানস হবে সিদ্ধ।
নিজের দুটি চরণ ঢাকো, তবে
ধরণী আর ঢাকিতে নাহি হবে।’
কহিল রাজা, ‘এত কি হবে সিধে,
ভাবিয়া ম’ল সকল দেশ‐শুদ্ধ!’
মন্ত্রী কহে, ‘বেটারে শূল বিঁধে
কারার মাঝে করিয়া রাখো রুদ্ধ।’
রাজার পদ চর্ম‐আবরণে
ঢাকিল বুড়া বসিয়া পদোপান্তে।
মন্ত্রী কহে, ‘আমারো ছিল মনে
কেমনে বেটা পেরেছে সেটা জানতে।’
সেদিন হতে চলিল জুতা পরা—
বাঁচিল গোবু, রক্ষা পেল ধরা।
ভাবিয়া ম’ল সকল দেশ‐শুদ্ধ!’
মন্ত্রী কহে, ‘বেটারে শূল বিঁধে
কারার মাঝে করিয়া রাখো রুদ্ধ।’
রাজার পদ চর্ম‐আবরণে
ঢাকিল বুড়া বসিয়া পদোপান্তে।
মন্ত্রী কহে, ‘আমারো ছিল মনে
কেমনে বেটা পেরেছে সেটা জানতে।’
সেদিন হতে চলিল জুতা পরা—
বাঁচিল গোবু, রক্ষা পেল ধরা।
রবীন্দ্রনাথের ‘জুতা আবিষ্কার’ কবিতাটি পড়েননি বা শোনেননি এমন লোক কমই আছেন। পৃথিবীর ধুলো-বালি, ময়লা থেকে উদ্ধার পেতে রাজা যখন পৃথিবী ঢাকতে ব্যস্ত, তখনই একজন চর্মকার এসে বললেন, ‘নিজের দুটি চরণ ঢাকো, তবে ধরণী আর ঢাকিতে নাহি হবে।’
এ কথা সত্য, ধুলো-বালি, ময়লা এবং রোগ-জীবাণু থেকে আমাদের সার্বক্ষণিক রক্ষা করে জুতা। পায়ের হাড় গঠন থেকে শুরু করে, সঠিক গড়ন এবং নানা রকম প্রদাহসহ বিভিন্ন রোগব্যাধির হাত থেকে আমাদের রক্ষা করে জুতা বা স্যান্ডেল। তবে সে জন্য প্রয়োজন সঠিক সময়ে সঠিক জুতা নির্বাচন।
স্যান্ডেল, কেডস এবং শু। পুরুষেরা এ তিন ধরনের জুতা ব্যবহার করে থাকে। ঋতুভেদে এসব জুতায় পরিবর্তন আনা প্রয়োজন। গরমে একান্ত প্রয়োজন না হলে শু না পরাই ভালো। এ ক্ষেত্রে দুই ফিতার স্লিপার পায়ের জন্য উপকারী। তবে যাঁদের নিয়মিত অফিস করতে হয়, তাঁদের প্রয়োজন প্রাকৃতিক চামড়ার নরম জুতা। অন্যদিকে বর্ষাকালে তলা পিচ্ছিল নয় এমন জুতা নির্বাচন দুর্ঘটনার হাত থেকে রক্ষা করবে আপনাকে।
জুতা নির্বাচনের ক্ষেত্রে আরামের চেয়ে সৌন্দর্যকেই প্রাধান্য দেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র তরিকুল ইসলাম। তবে এ লেভেলের ছাত্র আল ফাতেমির কাছে প্রাধান্য পায় স্বাচ্ছন্দ্য। তিনি বলেন, ‘আমি যেহেতু একটু শর্ট, তাই একটু উঁচু সোলের জুতা পরি। আমার কাছে সৌন্দর্য তিন নম্বরে।’
জুতার জন্য রয়েছে অনেক দোকান। কোনোটি দেশি ব্র্যান্ডের, আবার কোনোটি বিদেশি। তবে দেখে-বুঝে কেনাই ভালো। জানালেন, রাজধানীর পান্থপথে অবস্থিত অ্যাপেক্সের বিক্রয়কেন্দ্রের প্রতিনিধি মো. রুবেল মিয়া। তিনি জানান, সাধারণত তিন ধরনের উপকরণ দিয়ে জুতা তৈরি হয়। প্রাকৃতিক চামড়া, কৃত্রিম চামড়া বা সিনথেটিকস এবং কাপড়।
ত্বক বিশেষজ্ঞ ও বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, যাঁদের পায়ে অ্যালার্জি আছে, তাঁদের কৃত্রিম চামড়ার জুতা না পরাই ভালো। ডায়াবেটিসের রোগীদের আঁটোসাঁটো জুতা পরা ঠিক নয়। এ ক্ষেত্রে তাঁদের চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত। গরুর চামড়ার জুতা দীর্ঘস্থায়ী বেশি। নিয়মিত শু ব্যবহারকারীদের জন্য নরম চামড়া বেশি আরামদায়ক। বিয়ে, পার্টি বা যেকোনো অনুষ্ঠানে শক্ত চামড়ার শু পরাটা যদিও এখন ফ্যাশন।
স্যান্ডেলের ক্ষেত্রেও চামড়া হলে ভালো হয়। এ ক্ষেত্রে স্পোটর্স স্যান্ডেলগুলোও ব্যবহার করতে পারেন। গুণের দিক দিয়ে চামড়ার প্রকারভেদ রয়েছে। তাই বাজেট কম হলে কম দামি চামড়াও ব্যবহার করা যেতে পারে।
পরামর্শ
পা ঘামানো এবং দুর্গন্ধের জন্য জুতা একমাত্র কারণ না হলেও অন্যতম প্রধান কারণ। তাই এমন জুতা নির্বাচন করা প্রয়োজন, যেখানে পায়ে যথেষ্ট বাতাস পৌঁছানোর সুযোগ থাকে। অবশ্যই খেয়াল রাখা প্রয়োজন জুতার তলা, পায়ের সংস্পর্শে থাকে যে পাশ, যেন অবশ্যই প্রাকৃতিক চামড়ার হয়। শিশুদের পায়ের গঠনে জুতা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। ছোটবেলায় মাপমতো জুতা না পরলে শিশুদের পা বেশি চওড়া হয়ে যায়। আবার বেশি সময়ের জন্য জুতা পরানো হলে পা ছোট হয়ে যাওয়ার আশঙ্কাও থাকে। যাঁদের পায়ে জন্মগত সমস্যা থাকে, তাঁদের জন্মের পর থেকে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে বিশেষ ধরনের জুতা পরানো দরকার। এতে পায়ের সমস্যা অনেকাংশেই কাটিয়ে ওঠা যায়।
http://www.prothom-alo.com/life-style/article/361510
http://www.prothom-alo.com/life-style/article/36151
ইব্রাহিম ডায়াবেটিক ফুটকেয়ার হাসপাতাল
ডায়াবেটিক রোগীদের পায়ের চিকিৎসার জন্য বাংলাদেশ ডায়াবেটিক সমিতির একমাত্র বিশেষায়িত হাসপাতাল
৪/১ র্যাংকিন স্ট্রিট, ওয়ারী, ঢাকা
ফোন নং: ০২ ৯৫১২০২০ এক্সটেনশন ১৩৫, ১৩৬, ১৩৩
No comments:
Post a Comment